বংশ পরিচয়
বাংলার দক্ষিণাংশে এক উত্তর-রাঢ়ীয় কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সীতারাম রায়। তার পিতা উদয়নারায়ণ রাজমহলে নবাব সরকারের চাকরি করতেন। রাজমহলে থাকার সময় বর্তমানৃ বর্ধমান জেলার কাটোয়ার মহিপতি গ্রামের কুলীন কায়স্থের কন্যা দয়াময়ী দেবীকে তিনি বিয়ে করেন। দয়াময়ীর গর্ভে জন্ম হয় সীতারাম রায়ের। সীতারামের শৈশব কাটে মাতুলালয়ে। পড়ালেখাও সেখানে।
সীতারামের পিতা উদয়নারায়ণ শায়েস্তা খাঁর আমলে রাজমহল থেকে প্রথমে ঢাকায় এবং পরবর্তীকালে রাজস্ব আদায়কারী কর্মকর্তা বা তহশিলদার হিসেবে ভূষণায় আসেন। আগে ভূষণা ছিল বারোভুঁইয়ার অন্যতম ভুঁইয়া মুকুন্দরাম রায়ের রাজ্য। এরপর ভূষণা মোগলদের অধীনে এলে ভূষণায় এক জন ফৌজদার নিযুক্ত হন। সে সময় ভূষণায় উদয়নারায়ণ নিজের কাছে আনেন পুত্র সীতারামকে।
শৈশব ও যৌবন,
১৬৬০ সালে মীর জুমলা তার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। উদয়নারায়ন সে সময় ঢাকা চলে আসেন। তখন উদয়নারায়ন তার পরিবারকে সাথে আনেননি। ১৬৬৪ সালে শায়েস্তা খান বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। এরপর উদয়নারায়ণ তহশীলদার পদে পদোন্নতি পরবর্তীকালে একটি তালুকের মালিক হন।বর্তমান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলাধীন গুণবহা ইউনিয়নভূক্ত হরিহরনগরে তার বাসস্থান ছিল। কয়েক বছর পরে হরিহর নগরে মধুমতি নদীর তীরে তিনি তার বাসভবন নির্মাণ করেন এবং পরিবারকে তার কাছে নিয়ে আসেন। সীতারামের শৈশব কাটে কাটোয়ায় তার মাতুলালয়। সুজন পাঠশালায় সংস্কৃত শিখেছিলেন। বাংলা তখন চতুষ্পদী তে শেখানো হতো না। তাই নিজ গৃহে তিনি বাংলা শেখেন। তিনি চন্ডীদাস এবং জয়দেব পড়তে পারতেন। তার হাতের লেখা ছিল খুব সুন্দর। একটু বড় হলে তিনি ফারসি ভাষা শেখেন। তখন মুঘলদের সরকারি ভাষা ছিল ফারসি। ভূষণে আসার পর মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে তিনি উর্দু ভাষা শেখেন। তিনি লাঠি খেলা, অস্ত্র চালনা, ও অশ্বারোহণে পারদর্শী ছিলেন।
সীতারাম কীভাবে ভূষণার কর্তৃত্ব লাভ করেন তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। কেউ কেউ দস্যু সর্দার হিসেবে এলাকা দখলের কথা বলে থাকেন। তবে উত্তরাধীকারী সূত্রে তিনি ভূষণার জমিদারী লাভ করেন বলেই ধারণা করা হয়। চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি জমিদারী শুরু করেন। তরুণ বয়সে সীতারাম ঘন ঘন রাজধানী ঢাকায় আসতেন। সুবাদার শায়েস্তা খান তার সাহস এবং কর্মে মুগ্ধ ছিলেন। সে সময় পাঠান বিদ্রোহী করিম খান সাতারা পরগনায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। মুঘল ফোজদার বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হলে সীতারাম কয়েক হাজার পদাতিক এবং অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে এই বিদ্রোহ দমনে অভিযান শুরু করেন। তিনি বিদ্রোহ দমনে সফল হন। করিম খান যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। শায়েস্তা খান অত্যন্ত খুশি হয়ে তাকে নলদী পরগনার জায়গীর দান করেন।