গাইবান্ধার তরুন উদীয়মান ৪ পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির দুটি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন এর আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আর কিউএম জুলকার নাইন শুনানি শেষে মামলা দুটি খারিজের আদেশ দেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ দেশের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশকে কেন্দ্রকরে ও প্রতিহিংসার জেরে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে মামলা দায়ের করেছিলেন গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সুত্র থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে সুন্দরগঞ্জের তৎকালীন সরকারের সময়ের প্রভাবশালী এজেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের সংবাদ দেশের প্রথম সারির বেশ ক'টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এতে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ও ব্যক্তিগত ক্ষিপ্ততার জেরে সুযোগ সন্ধানী ও প্রশাসনিক হস্থক্ষেপের মাধ্যমে মানহানির অভিযোগ এনে একই বছরের ১৫ অক্টোবর রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতিবাজ সাবেক এই (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার। মামলায় কালের কণ্ঠের সাবেক সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বার্তা সম্পাদক, মফস্বল সম্পাদক ও প্রতিনিধি শেখ মামুন-উর রশিদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী, ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ, জেলা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান পলাশ, সাংবাদিক সামছুল হক ও মাহবুবার রহমান নামে এক মানবাধিকার কর্মীসহ মোট ১২ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। পরে পিবিআই তদন্ত শেষে ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর মধ্যে আবু জাহিদ কারী নামে এক সাংবাদিকের মৃত্যু হওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ ফরহাদ হোসেন লিটু বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলা দুটির চার্জ গঠন হয়। এরপর সাক্ষ্য গ্রহণের একাধিক দিন ধার্য থাকলেও বাদি আদালতের শুনানিতে হাজির না হয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য থাকলেও নিদিষ্ট তারিখেও বাদী সময় চেয়ে ২য় বার আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার বাদীকে স্ব-শরীরে আদালতে উপস্থিত থাকার আদেশ দেন। কিন্তু আদালতে শুনানির সময় বাদী পিআইও মোঃ নুরুন্নবী সরকার উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি তার পক্ষে শুনানির জন্য কোনো আইনজীবীও ছিল না। পরে আদালতের বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৭ ধারা অনুযায়ী বিবাদী গণমাধ্যমের চার (৪) সাংবাদিকে অব্যাহতির আদেশ দেন। বিষয়টিকে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের জয় আখ্যা হিসাবে দেখছেন বিবাদীর আইনজীবী সহ অন্যায়ভাবে মামলায় হয়রানি হওয়া সাংবাদিকরাও।
এ বিষয়ে সাংবাদিক শেখ মামুন-উর-রশিদ বলেন, দুর্নীতিতে আলোচিত পিআইও নুরুন্নবী সরকার আমাদের জাস্ট সোশ্যাল হ্যারাসমেন্টর টুল হিসেবে মামলাটি করেছিলেন। দীর্ঘ ৫ বছর আমরা ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের বারান্দায় দারস্থ্য হয়ে ঘুরেছি। আজকে সর্বশেষ আদালতের রায়ের মাধ্যমে সত্যের পক্ষে গণমাধ্যমের বিজয় হলো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিটা কর্মস্থলে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি এখনো বহাল তবিয়তে সরকারি এই গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানে এখনো আছেন সেটা দুঃখজনক বলে দাবী করেন ভিকটিমরা।
তিনি বলেন, আমার দাবি হলো পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিগত সময়ে যে অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ছিল সেগুলো সবই এখনো ফাইলবন্দি। তার বিরুদ্ধে আমরা যে সংবাদ প্রচার করেছিলাম সেসব সংবাদসহ পূর্বের সব অভিযোগগুলো তদন্ত করে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হলে এটাই হবে গণমাধ্যম কর্মীর প্রতি শ্রেষ্ঠ মানবতা।
সাংবাদিক জিল্লুর রহমান পলাশ জানান, একাধিক তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে পিআইও নুরুন্নবীর দুর্নীতি কর্মকাণ্ড নিয়ে শতভাগ সত্য সংবাদ প্রকাশের পরও আমাদের নামে হয়রানিমূলক মানহানির দুটি মামলাটি করেন। আদালত কর্তৃক সমন জারির পর আমরা জামিন নিয়েছি এবং নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছি। কিন্তু মামলার বাদী নুরুন্নবী সরকার নিজে এবং সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারেনি।
এছাড়া তিনি আইনজীবীদের মাধ্যমে অভিযোগও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত, হয়রানির উদ্দ্যেশে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। দীর্ঘ ৫ বছর দুই মামলার হাজিরা দিতে সময়, শ্রমসহ অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের বিজয় সু-নিশ্চিত হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা সত্যের পক্ষের জয় হিসেবে দেখছি।
মুলত ২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর টানা ৫ বছরের চাকরিতে নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকসহ পাঁচটি মামলা হয় সুন্দরগঞ্জ থানায়।
এদিকে, দুর্নীতির সংবাদ প্রচারে তদন্তে সত্যতা মিল পাওয়ায় গেল বছর নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্যে সিন্ডিকেট ও অসদাচরণের দায়ে বিভাগীয় দুটি মামলা দায়ের হয়। একই সঙ্গে লঘুদণ্ড হিসেবে তার বার্ষিক বর্ধিত বেতন স্থগিত ও স্থায়ীভাবে বেতন গ্রেড নিম্নতর (ডিমোশন) পদাবনতির আদেশ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। তাতেও তিনি থেমে থাকেনি।বরং আপসোস না করে দুর্নীতির পাহার গড়ে তুলেছিলেন তিনি।