ঢাকা থেকে প্রায় ৫৭ কি:মি: দূরে উত্তর পশ্চিম দিকে মির্জাপুর উপজেলার অবস্থান। এখনকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর অন্যতম বাহক মিৎশিল্প। অনেকেই মতে, এটি শুধুমাত্র শিল্প নয় আবহমান গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
মাটির নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশার কারণে দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। অনেকেই বংশগত পরস্পরায় দীর্ঘ সময় পার করে এ শিল্পের মাধ্যমে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মাটির বাসন-কোসন, হাড়ি-পাতিল, ফুলের টপ, মাটির ব্যাংক, খুড়া, ফুলদানি, ইত্যাদি তৈরি করে আসছে। তবে কালের পরিবর্তন ও প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যর কারণে এই শিল্প এখনো আলোর মুখ দেখতে পারেনি। মিৎশিল্পের কারিগরদের নিপুন হাতে ছোয়ায় মাটি হয়ে ওঠে বিভিন্ন সৌখিন সামগ্রিক প্রাচীন সভ্যতা অপূর্ব অপগ্রহণ মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। পুরুষ ও বৌদিদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মাটি হয়ে উঠে বিভিন্ন ধরনের সৌখিন সামগ্রী। তাদের বলা হয় পাল সম্পাদায় এ শিল্পের পালদের বর্তমানে চলছে চরম দুর্দিন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আগে পাল সম্পাদায়ের লোকেরা মাটিও বালুসহ খড়কুটো বিনামূল্যে সংগ্রহ করত। বর্তমানে এগুলো কিনতে হয়। যার কারনে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার যুগের মৃৎশিল্পীদের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় কারনে তারা আজ হতাশ হয়ে পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। মৃৎশিল্পী জ্যোতিষ পাল বলেন,মাটির জিনিসপত্র বেচাকিনা বন্ধ হয়ে গেছে। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিকের তৈজসপত্র , বের হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আগের মত আর চলে না। মাটির তৈরি তৈজসপত্র আগে ভালই চলতো। সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করতাম।
সারাদিন কাজ করতাম, হাট-বাজারে যেতাম চার-পাঁচ হাজার টাকা বেচাকিনা করতাম। এখন আর আগের মতো বেচাকেনা নেই, এখন আমাদের সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে গেছে। লৌহজং নদীর কোল ঘেঁষে পাল সম্পাদায় বসবাস করে।
কুমারপাল, তেলীপাল প্রায় শত বছর আগে থেকে এই মৃৎশিল্পের পেশার সাথে জড়িত কিন্তু আধুনিকায়ন প্রয়োজনীয় পুঁজি স্বল্পতার কারণে এ পেশার নৈপুণ্যতা হারাচ্ছে, অনেকে জীবিকা তাগিদে এখন ভিন্ন পেশায় অংশগ্রহণ করছে, ফলে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। মির্জাপুরে কুমারজানি পালপাড়া,কদিম দেওহাটা পালপাড়া, পুষ্টকামুরী
পালপাড়া ও বাইমহাটিপালপাড়া সহ মির্জাপুরে আরো বিভিন্ন এলাকাতেই মিৎশিল্পীর কাজ করা হয়। এখানে প্রায় তিনশত পাল সম্পাদয়ের পরিবার এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
এদের মধ্যে ভবেশপাল,সংকরপাল আবার মাটির মূর্তি তৈরিতে খুবই নৈপুণ্য। অন্যান্য শিল্পীরা ফুলের টপ, ফুলদানি, হাড়ি পাতিল ইত্যাদি মাটি দিয়ে তৈরি করে কিন্তু প্লাস্টিকের জিনিস বাজারে প্রচুর পরিমাণে আসায় মৃৎশিল্প প্রায় ধ্বংসের পথে, বাপ ঠাকুরদা বংশগত পেশা হওয়ার কারণে তারা এটা ছাড়তেও পারছে না, অভাবের কারণে এনজিও থেকে চড়া সুদের ঋণ নিয়ে তারা এখন চরম দারিদ্রতার মুখে পড়েছে। সরকারি সংস্থা ও সচেতন নাগরিকদের উচিত তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা।