তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারের ১৮ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চারটি বসতঘর ও একটি পিকআপ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে এতোগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। তারা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবী করেছেন। এতে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ইব্রাহিম সিকদার পনু। ঘটনা ঘটেছে রবিবার রাত সোয়া ১২ টার দিকে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন এবং প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারে রবিবার রাত সোয়া ১২ টার দিকে বশির খাঁনের তেলের দোকান থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু তারা মেশিনের তেল নিয়ে না আসায় এক ঘন্টা মেশিন চালু করতে পারেনি। ততক্ষণে বাজারের বেশ কিছু ঘর পুড়ে গেছে। পরে আমতলীর ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও স্থানীয়রা দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। ততক্ষণে বাজারের মোসাঃ পানু, মাজেদা বেগম, সবুজ প্যাদা, রাব্বি প্যাদার বসতঘর এবং মিজান আকন, ফয়সাল, নির্মল শীল, কাইয়ুম মৃধা, মনির শীল, নাশির খাঁন, খবির টেইলার্স, হানিফ হাওলাদার, ছত্তার হাওলাদার, ফারুক ঘরামী, বশির খাঁন, হারেস খাঁন, মহিবুল্লাহ, আলমগীর প্যাদা, হানিফ সিকদার , হাবিব মোল্লা, রহিম কাজী ও সবুজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সময়ে বাজারের পাশে সাইফুল খাঁনের একটি পিকআপ গাড়ী ছিল সেটিও পুড়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ফায়ার সার্ভিসের গাফলতির কারনে বাজারের এতোগুলো ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবী করেছেন।
ব্যবসায়ী বশিন খাঁন বলেন, জীবনে যা আয় করেছি। তা এক নিমিশে শেষ হয়ে গেলো। আর কিছুই রইলো না। পরিবার পরিবজন নিয়ে এখন পথে বসতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমার দোকানে ১৬ ব্যারেল পেট্রোল, দুই’শ বস্তা চাল ও ক্যাশ বাক্সে চার লাখ টাকা ছিল। তা সমুদয় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ বলেন, অন্তত অর্ধ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। ঘুড়ে দাড়ানোর কোন পথ নেই। তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মেশিন চালু করতে এক ঘন্টা গেলেছে। ততক্ষণে সব পুড়ে গেছে। আমতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা না আসলে বাজারের কিছুই থাকতো না। তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবী করেন তিনি।
কাপড় ব্যবসায়ী মিজান আকন বলেন, দোকানের সব পুড়ে চাই হয়ে গেছে। দোকানে অন্তত ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এখন কিছুই নেই।
বাজারের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী নাশির খাঁন বলেন, কালকে ছিলাম ধনী আজকে আমি ফকির। আমার কিছুই রইলো না। তিনি আরো বলেন, ফায়াস সার্ভিস কর্মীদের গাফলতির কারনে বাজারের এতোবড় সর্বনাশ হয়েছে। আমি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের শাস্তি দাবী করছি।
তালতলী ফায়ার সার্ভিস লিডার এসএম নুরুজ্জামান আগুন নেভাতে গাফলতির কথা অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রা কাছে পানি থাকা সত্তে¡ও দুরের পাইন বসিয়েছে, ফলে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে কেন এক ঘন্টার আগে মেশিন চালু করতে পারলেন না এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি তিনি।
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সেপেক্টর মোঃ হানিফ বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুনের লাগার কারন চিহিৃত করা যায়নি। তদন্ত করে প্রকৃত কারন চিহিৃত করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্দেশনা দিয়েছি। স্থানীয়রা তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের গাফলতির অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলে, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। আপাতত প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।