মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি; সারাদেশে নাই টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এই কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন। স্টেশন মাস্টার মোঃ নাজমুল হুদা বকুল ।
যাত্রীদের অনেকে এসেছে। আমরা টিকেট কাউন্টার থেকে তাদের ফেরত দিয়েচ্ছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন পরিচালকদের সংগঠন রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আফজাল হোসেন এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক যায়যায় সময়কে বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।
আমাদের কর্মসূচি চলছে, চলবে; যতক্ষণ না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সমস্যাগুলো নিরসন না করবে।
ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বড় শহরগুলো থেকে সকালে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। তবে সোমবার রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন বিভিন্ন স্টেশন ছেড়ে গেছে, সেগুলো মঙ্গলবার সকালের মধ্যে তাদের গন্তব্যের স্টেশনে পৌঁছাবে।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা। রেলপথ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, ট্রেনের যাত্রা বাতিল হলে যাত্রীদের টিকেট ফেরত দেওয়া হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দাবি বহুলাংশে মেনে নেওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি৷ এই কারণে আজ ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে৷ রেল-এর যাত্রা বাতিল হলে পূর্বে ক্রয়কৃত টিকেটের টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ফেরত দেবে।
গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল রানিং স্টাফরা।
সোমবার তাদের রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে ডাকা হলেও আন্দোলনকারী রানিং স্টাফরা তাতে যোগ দেননি।
তবে সোমবার বেলা ৫টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে বৈঠক করেন রানিং স্টাফরা। সেখানে রেল কর্মকর্তারাও ছিলেন।
আমরা বলেছি আজ রাত ১২টার আগে আমাদের হাতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের কাগজপত্র দেবেন। আমাদের ভাতা আগে যেমন ছিল তেমন দিতে হবে। আমরা ৪ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু তারা বারবার আমাদের কাছে সময় নিয়েছেন, যখন আমরা আলটিমেটাম দেই, শেষ সময়ে এসে তারা আমাদের সঙ্গে বসেন, কিন্তু কোনো দাবি পূরণ হয় না। এজন্য এবার আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি না।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।
এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন যে, রেলওয়ের রানিং স্টাফরা ১৬০ বছর ধরে অবসরের পর মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পেয়ে আসছেন। রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক— যে কোনো দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ট্রেন সচল রাখেন তারা।
“তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি বা জাতীয় দিবসের বন্ধ নেই। কিন্তু গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেদের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় ঢাকতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর রেলওয়ের রানিং স্টাফদের বেতন, পেনশন ও আনুতোষিক কমিয়ে দেওয়া হয়।
রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের এসব দাবির পক্ষে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এ জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
নতুন নিয়োগ পাওয়া ট্রেনচালক, সহকারী ট্রেনচালকসহ রানিং স্টাফদের পুরোনোদের মত সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
এছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন, যা রেলওয়ের কোনো আইন বা বিধি বিধানে বলা নেই।
রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মজিবুর বলেন, “এর আগেও আন্দোলন হয়েছে। ২০২২ সালে ১৩ এপ্রিল কর্মবিরতি পালন করলে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর বারবার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোনো সমাধান এখনো পর্যন্ত হয়নি।