1. info@www.jayjaysomay.com : দৈনিক যায়যায় সময় :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:
সন্তানসহ অর্ধকোটি টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে উধাও প্রবাসীর স্ত্রী নিয়ামতপুরে ভাবিচা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত পশুর হাটের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ঢাকায় চোর চক্রের ৩ সদস্যকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করেছে সাভার থানা পুলিশ গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বনভূমির ৩ একর ৩০ শতাংশ জমি দখল ১৯ বছর পর বোদা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন মির্জাপুরে নারীকে শ্লীলতহানি ও মারধরের মামলায় বাঁধন গ্রেফতার, পিস্তল ওসমান পলাতক মির্জাপুরে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার বাবা নিয়ামতপুরে সদর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত মধুপুর ৪ মাসের সন্তান বিক্রি করে মোবাইল ফোন কিনলেন মা, উদ্ধার করল পুলিশ

সীতারাম রাজার সংক্ষিপ্ত জীবনের দ্বিতীয় অংশ

ইমরান, বোয়ালিয়া প্রতিনিধি:-
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

জায়গিরদারি লাভ করার পরে তিনি একটি নিজস্ব সৈন্য বাহিনী গঠনে সচেষ্ট হন। সীতারামের সৈন্যদলে বহু মুসলমান সৈনিক ছিলেন। শোনা যায়, তিনি মুসলমান সেনাপতিদিগকে ভাই বলিয়া ডাকিতেন এবং হিন্দু মুসলমানের মিলনের জন্য সততা চেষ্টিত ছিলেন।

বাগের হাটের খাঁন জাহান আলী মতো সীতারামেরও একদল বেলদার সৈন্য ছিল। ঢাকায় তার সাথে একজন ভাড়াটে সৈনিক রামরূপ ঘোষের পরিচয় হয়েছিল। করিম খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি তার সহযোগী ছিলেন। রামরুপ কুস্তিতে পারদর্শী ছিলেন। তিনি মেনা হাতি নামে পরিচিত ছিলেন। কারণে কোন এক সময় তিনি খালি হাতে একটি ছোট হাতি হত্যা করেছিলেন। রামরূপ সীতারামের সামরিক বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন।

সীতারাম ভূষণার কর্তৃত্ব লাভ করার পর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে নিয়ে বাহিনী গঠন করেন। মেনাহাতী, রূপচাঁদ ঢালী, বকতিয়ার খান, মৃতরা সিংহ, গোবর দলন প্রমুখ বিখ্যাত সেনাপতিরা সীতারামের সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। মাগুরা ও ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় আজও যার বীরত্ব গাথা লোকমুখে ফেরে- তিনি হলেন সীতারামের প্রধান সেনাপতি মেনাহাতী। মেনাহতীর প্রকৃত নাম রূপনারায়ণ বা রামরূপ ঘোষ। কেউ কেউ বলেন মৃন্ময় ঘোষ। মেনাহাতী নড়াইল জেলার অন্তর্গত রায় গ্রাম নিবাসী ঘোষ বংশের পূর্বপুরুষদের একজন। দৈর্ঘ্যে ৭ হাত, প্রকান্ড মস্তক বিশিষ্ট বিশাল দেহী ছোট খাট হস্তী সদৃশ্য বিধায় মেনাহাতী বলে তার এই খ্যাতি। তবে স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী তিনি পিঁড়ি দিয়ে পিটিয়ে সীতারামের একটি হাতী হত্যা করেন বলে তার নাম হয়েছিল মেনাহাতী।

গ্রাম এলাকায় আজও কেউ কেউ তাকে মেলাই হাতী বলে জানে। রূপচাঁদ ঢালী সীতারামের অপর একজন সেনাপতি ছিলেন। রূপচাঁদের বংশধরগণ মহম্মদপুর উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করেন বলে জানা যায়। রাজা সীতারামের অপর একজন সেনাপতি শিবরাম চক্রবর্তীর নামানুসারে মাগুরা শহরের অদূরে ‘শিবরামপুর’ গ্রাম অবস্থিত। তার বাহিনীর অপর এক সেনাপতি ছিল ফকির মাচ্চকাটা। বক্তিয়ার খান ছিল একজন পাঠান দস্যু। আমল বেগ নামে একজন মুঘল সৈন্য তার বাহিনীতে যোগদান করে।

রাজা সীতারাম তার এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় খ্যাতি অর্জন করেন। প্রাচীনকালে মাগুরা অঞ্চল সুন্দরবনের অংশ ছিল। বনাঞ্চলের আধিক্যের কারণে এ এলাকায় দস্যু তস্করদের উপদ্রব হতো। যদুনাথ ভট্টাচার্য তার ‘সীতারাম রায়’ গ্রন্থেরাখা, শ্যামা, রামা, মুম্ভো, বিশে, হরে, নিমে, কালা, দিনে, ভুলো, জগা ও জেদো এই ১২জন কুখ্যাত ডাকাতের উল্লেখ করেছেন। তিনি ভূষণা, হরিহর নগর, মহম্মদপুর, নলদী ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মগ ও ফিরিঙ্গী দস্যুদের কঠোর হস্তে দমন করেন।মুঘল সম্রাট শাহজাহানের মৃত্যুর পর সমগ্র সুবাহ বাংলা জুড়ে এক অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সমগ্র নলদী পরগনা জুড়ে দস্যুদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। এজন্য প্রাচীন কবিতার বলা হয়,

“ধন্য রাজা সীতারাম বাংলা বাহাদুর যার বলেতে চুরি ডাকাতি হয়ে গেল দূর। এখন বাঘ মানুষে একই ঘাটে সুখে জল খাবে এখন রামী শ্যামী পোঁটলা বেঁধে গঙ্গা স্নানে যাবে॥”

অধিকান্ত তিনি বাংলার উপকূল অঞ্চলেও মগ ও ফিরিঙ্গীদের উপদ্রব বন্ধের জন্য চেষ্টা করেন। ১৬৮৪ সালে তার পিতা ও মাতা খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মারা যান। তাদের শ্রাদ্ধের পর তিনি তীর্থ করতে গয়ায় যান। তার সচিব মনিরাম রায় এবং প্রধান সহযোগী রামরূপ ঘোষ তার সাথী হন। জায়গীর এর দায়িত্ব তার ছোটভাই লক্ষ্মীনারায়ণের নিকট হস্তান্তর করা হয়। উত্তর ভারতে তীর্থ করে তিনি সম্রাট আত্তরঙ্গজেবের সঙ্গে দেখা করেন এবং এতদ অঞ্চলের নৈরাজ্যের কথা তাকে অবহিত করেন। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সীতারামকে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান পূর্বক সম্রাট ১৬৮৭-৮৮ খ্রীস্টাব্দে তাকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তার রাজ্যকে আরো দক্ষিণে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত করার অধিকার দেয়া হয়।

[১] দিল্লী হতে ফিরে এসে তিনি সুবাদার মুর্শিদকূলী খানের সনদ ও অনুমতি বলে উপকূল অঞ্চলে দুর্গ নির্মাণ ও সৈন্য মোতায়েন করেন। ফলে এতদঞ্চলে শান্তি ফিরে এসেছিল এবং জনগণও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল।

রাজা
একই বছর সীতারাম নালদি, সাঁতার এবং ভাটি অঞ্চলের রাজা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। রাজা সীতারাম রায় তার পৈতৃক নিবাস মধুমতি নদীর তীরবর্তী হরিহর নগর নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এ শহরটিতে বেশ কিছু সুরম্য ইমারত ও মন্দির নির্মাণ করেন। জনগণের পানীয় জলের কষ্ট লাঘবের জন্য খনন করেন কয়েকটি দীঘি। সে আমলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র রূপে গড়ে উঠে এই হরিহর নগর। এখনও এখানে এসবের কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। রাজা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করলেও তার কোন রাজধানী ছিল না। তাই তিনি বর্তমান মাগুরার মহম্মদপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। রাজা সীতারাম ১৬৯৭-৯৮ খ্রীস্টাব্দে মহম্মদপুরে রাজধানী স্থাপন করেন।মহম্মদপুরে তিনদিকে বিল এবং একদিকে মধুমতি নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিল। দুর্গটি চতুর্ভুজ আকারে তৈরি করা হয়েছিল। যার এক একটি বাহুর পরিমাপ ১৩০০ ফিট বা ৪০০ মিটার এর কম ছিল না। দুর্গটির চারিদিকে প্রশস্ত পরিখা ছিল। দুর্গটির উত্তরায় ও পূর্বে ছিল কালিগঙ্গা নদী। দুর্গের ভিতরে সেনা ছাউনি, মন্দির এবং জলাধার ছিল।

[২] মহম্মদপুরকে রাজধানীর স্থান হিসেবে নির্ধারণ করার ব্যাপারে একটি প্রবাদ আছে। আর তা হ’ল, একদিন সীতারাম ঘোড়ায় চড়ে এই পথ দিয়ে যান। পথিমধ্যে হঠাৎ তার ঘোড়ার পা মৃত্তিকা গর্ভে আটকে যায়। শত চেষ্টা সত্ত্বেও ঘোড়ার পা মৃত্তিকা থেকে উঠাতে পারেন না। পরে লোকজন দিয়ে স্থানটি খনন করে ঘোড়ার পা উদ্ধার করেন। খননকালে এখানে একটি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। আর মন্দিরে তিনি পান লক্ষীনারায়ণের মুর্তি। লক্ষীনারায়ণ সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই স্থানটিকে শুভ মনে করে সীতারাম প্রথমত এখানে নিজের বাসভবন নির্মাণ ও পরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানীর নামকরণের ব্যাপারে একাধিক মত আছে। কেউ মনে করে স্থানীয় মুসলিম ফকির মোহাম্মদ শাহের নামানুসারে তার রাজধানীর পুরাতন নাম বাগজান এর স্থলে মহম্মদপুর নামকরণ করেন।আবার কেউ মনে করেন সূফীসাধক মুহম্মদ আলী শাহ এর নামানুসারে সীতারাম রায় রাজধানীর নাম মহম্মদপুর রাখেন। অবশ্য মহম্মদপুর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বড়রিয়া গ্রামে আলী মাওলার দরগাহ ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হিসেবে অদ্যাবধি বিদ্যমান। আবার কেউ কেউ মনে করেন ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠ প্রচারক মহানবী হযরত মুহম্মদ এর নামানুসারেই সীতারাম তার মুসলমান প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য রাজধানীর নাম ‘মহম্মদপুর’ রাখেন।

মহাম্মদপুর সীতারামের রাজধানী হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত হয়। এখানে এক সময় গৌড় বঙ্গের একটি টাঁকশাল ছিল বলে জানা যায়। ব্যবসায়ীগণকে সব সময় মহম্মদপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহিত করতেন। ক্রমেই মহম্মদপুরে এই অঞ্চলের একটি উঠতি ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। সীতারাম তার সেনাবাহিনীতে নতুন সৈন্য ভর্তি করেন ও গোলন্দাজ ডিভিশন চালু করেন।

তার দুটি বিখ্যাত কামান কালে খান এবং ঝুমঝুম খান এই সময় বাহিনীতে সংযোগ করা হয়। মহম্মদপুরে সমৃদ্ধির সময়ে মধুমতি নদী এই স্থানের প্রান্ত দিয়া প্রবাহিত ছিল একসময়

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট