চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রাম অঞ্চল গুলোতে গরুর গোবর থেকে গুঠা/নোনদা তৈরী করে অনেক মধ্যেবিত্ত্য পরিবার গুলোর সংসার চলে। অনেকেই আবার গরুর গোবর থেকে যৈব সার তৈরি করে কৃষি কাজ ব্যবহার করে। নিম্নবৃত্ত ও মধ্যেবৃত্ত পরিবারের গৃহিনীদের বাড়তি আয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে কোন প্রকার বাড়তি পুঁজি বা মূলধন লাগে না।
গ্রামগঞ্জে বেশিরভাগ বাড়ি গুলোতে দুর/চারটা গরু পালন করে থাকে। এই গুঠাগুলো জেলায় নতুন নয়। শতাধিক বছর থেকে এ ঐতিহ্যবাহী গুঠা তৈরীর প্রথা প্রচলিত আছে। গুঠা তৈরী করে জেলার নিন্মবৃত্ত পেশার গৃহিনীরা। অনেকেই গুঠা বিক্রী করে সংসারের নানা কাজে সহযোগীতা করে থাকে। যেমন ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ,পোশাক কেনা, নিজের শাড়ি,জামা সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়। শুধু তাই নয় গরির পরিবার গুলো তিল তিল করে টাকা জমিয়ে আকস্মিক বিপদের সময়ও কাজে লাগায়।এ গুঠা গুলো ছোট ব্যবসায়ীরা গ্রাম্য এলাকা থেকে ক্রয় করে ভ্যান যোগে জেলা ও জেলার বাইরে রপ্তানী করে থাকে। এমনকি এ গুঠা বিদেশেও রপ্তানী করা হয়।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় ৩০-৩৫ জন গৃহিনীর সাথে কথা বলে জানা গেছে এ কাজটি সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে করা যায়।মোবারকপুর ইউনিয়নের এক গৃহিনী ও অনার্স পড়ুয়া মাসা. বৃষ্টি জানান,আমার স্বামী আমাকে চারটি গরু কিনে দিয়েছেন। লেখাপাড়া ও সংসারের কাজ করেও আমি গরু পালন করি। এটি আমার এক ধরনের নেশা। তার সাথে সাথে গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি গুঠা তৈরী করে বাঁশ বেঁধে তারে সারিবন্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে শুকাই। মাঝে মাঝে এপিট ওপিট উল্টাইতে হয়। শুকিয়ে গেলে বাঁশের তৈরী মাচায় গুছিয়ে রাখি।প্রতি মাসে ২ বার ব্যবসায়ীরা আসে ২ টাকা ধরে নিয়ে যায়। প্রতিমাসে আয় হয় প্রায় ১৮০০ টাকা। যার মধ্যে থেকে আমার স্বামীকে কিছু টাকা দিই এবং কিছু টাকা আমার কাছে রেখে বিভিন্ন কাজে খরচ করি। এ কাজে আমার লেখাপড়া ও সংসারের কোন ক্ষতি হয় না। শুধু বাড়তি কিছু পরিশ্রম করতে হয়। তিনি আরো জানান, এ গুঠা দিয়ে সারা বছর জালানীর যোগান দেয়। দাই পুখুরিয়া ইউনিয়নের একেবারে অসহায় গৃহিনী আলেয়া খাতুন মাত্র একটি গরুর গোবর থেকে মাসিক ৬০০ টাকা লক্ষীপুর গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা খাতুন মাসিক ৩০০০ টাকা আয় করে সংসারের খরচ করে। সনাতন ধর্মানুসারী শ্রী সবিতা সাহা জানান আমাদের ৩৫টি গরু সারাদিন মাঠে চরায় শুধু রাতের গোবর থেকে প্রতিদিন ১০০ টি গুঠা তৈরী করি গ্রামের চায়ের দোকানদার ও ভ্যানওয়ালার নিকট বিক্র করে মাসিক ৬০০০ টাকা আয় করে গরুর খাবার ক্রয় করি। বীর মুক্তিযোদ্ধ তসলিম উদ্দিন বলেন গুঠা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। আমাদের মা খালারাও এ কাজটি করেছেন। এর মাধ্যমে গ্রাম্য মহিলারা সাংসারিক কাজের পর গুঠা তৈরী করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনে এবং সংসারে সারা বছরের জ্বালানীর ব্যবস্থাও হয়। গুঠা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারিত হওয়ায় গাছ কাটা কম হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। এটি আমাদের এলাকায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে পড়ে।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, গুঠা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করার পর যে ছাই গুলো হয় সে থেকে সার হিসাবে কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। গুঠা তৈরীর কারিগর জেলার শত শত মহিলা বাড়তি আয় করতে পারে।তবে আমি সর্ব উচ্চচেষ্টা করবো এটিকে কুটির শিল্পের আওয়াতায় আনার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃ পক্ষের সুদৃষ্টি কামনায় আলোচনা করবো।